যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর্যের সঙ্গে ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে মঙ্গলবার শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে।
বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য ৭১ বছর আগে ঢাকায় জীবন উৎসর্গকারী ভাষা বীরদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের স্মরণে দূতাবাস দিনব্যাপী এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান সোমবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে দূতাবাস প্রাঙ্গণে নির্মিত শহিদ মিনারের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়।
এ সময় ‘অমর একুশে’ নিয়ে রচিত বিখ্যাত গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ বাজানো হয়। দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সকালে দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতিতে রাষ্ট্রদূত দূতাবাসের সামনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত অবস্থায় উত্তোলন করেন। দিবসটি স্মরণে এক প্রভাত ফেরিরও আয়োজন করা হয়।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে দূতাবাসের বঙ্গবন্ধু কর্নারে অবস্থিত জাতির পিতার আবক্ষ মূর্তিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী প্রদত্ত বাণী পাঠ করে শোনান ডেপুটি চীফ অব মিশন ফেরদৌসী শাহরিয়ার, মিনিস্টার (ইকনোমিক) মো. মেহেদী হাসান, মিনিস্টার (প্রেস) এজেডএম সাজ্জাদ হোসেন ও কাউন্সেলর (পাবলিক ডিপ্লোমেসি) আরিফা রহমান রুমা।
পরে মহান ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস নিয়ে নির্মিত দুটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। ভাষা আন্দোলনের শহীদদের আত্মার মাগফেরাত এবং জাতির অব্যাহত শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
সন্ধ্যায় বাংলাদেশ দূতাবাসের বঙ্গবন্ধু অডিটোরিয়ামে দিনটির তাৎপর্য তুলে ধরে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। পরে বিশ্বব্যাপী সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য তুলে ধরতে বাংলাদেশসহ ছয়টি দেশের শিল্পীরা একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন।

রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান তার বক্তব্যে মহান ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে বাঙালি জাতির জন্য বাতিঘরের মতো আখ্যায়িত করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে দেশ এখন বঙ্গবন্ধুর আজীবনের লালিত স্বপ্ন- একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলায় পরিণত হওয়ার পথে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেশের উন্নয়নে ঐক্যবদ্ধভাবে অবদান রাখতে এবং নতুন প্রজন্মকে সমৃদ্ধ বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে আরও জানতে উৎসাহিত করার আহ্বান জানান।
বঙ্গবন্ধু অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ, ভারত, প্যারাগুয়ে, ঘানা ও নেপালের শিল্পীরা এবং পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোর সমন্বয়ে গঠিত একটি সাংস্কৃতিক দল তাদের নিজস্ব সংগীত ও নৃত্য পরিবেশন করে অতিথিদের মুগ্ধ করেন।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিক, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধি এবং প্রবাসী বাংলাদেশিরা উপস্থিত ছিলেন।
কাউন্সেলর (পলিটিকাল-১) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ও ফার্স্ট সেক্রেটারি (পাসপোর্ট ও ভিসা উইং) মো. আব্দুল হাই মিল্টন দিনব্যাপী দুই পর্বের এই অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন।